facebook Twitter RSS Feed YouTube StumbleUpon

Home | Forum | Chat | Tours | Articles | Pictures | News | Tools | History | Tourism | Search

 
 



Recent articles by author
আইসিসি সংস্কার প্রস্তাবনা: বাংলাদেশের নিজস্ব লড়াই (2014)
স্বাগতম, হে ভারতীয় ক্রিকেট দল (2011)
U-19 World Cup 2006: Tournament grouping and performance analysis (2006)
Bangladeshi bowlers against top Test batsmen (2006)
Bangladeshi bowling lineup for the Sri Lanka tests (2005)

 
Send Feedback | Email Article | Print Article | Font: | Size:

BanglaCricket Article

The Big 3 draft proposal to revamp the entire ICC cricket administration and revenue sharing has caused intense controversy. Our own Babubangla gives us a dispassionate analysis on how the proposal might impact Bangladesh.

আইসিসি সংস্কার প্রস্তাবনা: বাংলাদেশের নিজস্ব লড়াই

Published: 28th January, 2014


Discuss

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) আইসিসি সংস্কার প্রস্তাবের পক্ষে না বিপক্ষে অবস্থান নিবে তা নিয়ে বিভিন্ন ধরণের সংবাদ মিডিয়াতে এসেছে। একবার জানা গেলো, বিসিবি ২০-৩ ভোটে প্রস্তাবের পক্ষে অবস্থান নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরে বিসিবি আবার জানিয়ে দিলো প্রস্তাবের পক্ষে অবস্থান নেয়ার কোন সিদ্ধান্ত বিসিবির সভাতে হয়নি।  সর্বশেষ অবস্থান হল, বিসিবি বাকি ক্রিকেট বোর্ডগুলোর অবস্থান জানার পর এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবে।   ইন্ডিয়া-ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বোর্ড যৌথভাবে আইসিসি’র কার্যক্রম সংস্কারের লক্ষ্যে যে প্রস্তাব এনেছে তার সাথে সব ক্রিকেট খেলুড়ে দেশেরই লাভ ক্ষতি জড়িত। তাই সকলের সাথে মিলিয়ে বিসিবির সিদ্ধান্ত নেয়ার মনোভাব হয়তো ঠিক আছে। কিন্তু এই প্রস্তাবের সাথে বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট খেলা বন্ধ হয়ে যাবার ব্যাপারটাও জড়িত। এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সংগ্রাম একার। এই একাকী সংগ্রামে “দেখি না কি হয়” নীতির পরিবর্তে প্রয়োজন সক্রিয় ক্রিকেট ও রাজনৈতিক কূটনীতির উদ্যোগ।

আইসিসি প্রস্তাবের প্রধান অংশগুলো হল (কোন নির্দিষ্ট ক্রমানুসারে নয়)

(১) আইসিসির আয়-রোজগারের ভাগবন্টন

(২) বিভিন্ন দেশের মধ্যকার ক্রিকেট ট্যুর প্রোগ্রাম নির্ধারণের ক্ষমতা আইসিসি হাত থেকে তুলে নেয়া

(৩) আইসিসির পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা ইন্ডিয়া, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার হাতে তুলে দেয়া।

(৪) টেস্ট ক্রিকেটকে প্রমোশন-রেলিগেশনের ব্যবস্থাসহ দুই-স্তর বিশিষ্ট পদ্ধতিতে আনা (ইন্ডিয়া-ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া রেলিগেশনের বিধান থেকে মুক্ত)

আসুন একে একে উপরের বিষয়গুলো বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।

আইসিসির আয়-রোজগারের ভাগবন্টনঃ

ক্রিকেট খেলা থেকে আয়োজকদের (আইসিসি কিংবা ক্রিকেট বোর্ড) প্রধান আয়ের উৎসগুলো হল খেলার সম্প্রচার সত্ত্ব বিক্রি,  খেলার অফিসিয়াল সরঞ্জামের স্পন্সরশীপ বিক্রি, সিরিজ বা টুর্নামেন্টের স্পন্সরশীপ বিক্রি এবং খেলার টিকেট বিক্রি।

কার কার মধ্যে খেলা হচ্ছে তার ভিত্তিতে খেলা আয়োজনের আয় নির্ভর করে। যেমন, বাংলাদেশ যদি জিম্বাবুয়ের সাথে খেলে, সেই খেলার ব্যাপারে বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়েতে মূলত: দর্শকদের আগ্রহ থাকবে। এখন খেলাটা যদি বাংলাদেশ ও ইন্ডিয়ার মধ্যে হয়, তাহলে বাংলাদেশের দর্শকের সাথে যোগ হবে ইন্ডিয়ার বিশাল দর্শকের মার্কেট। এছাড়া এই দুই দেশ বাদেও অন্যত্রও এই খেলা নিয়ে  কিছুটা আগ্রহ তৈরি হবে। এখন খেলাটা যদি ইন্ডিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে হয় কিংবা ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে হয়, সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশছাড়াও সেই খেলার জন্য ক্রিকেট-প্রেমী দর্শকদের একটা গ্লোবাল মার্কেট থাকে। এভাবে একটা খেলার দর্শকের মার্কেট যত বড়, সেই খেলা সম্প্রচার-স্বত্বের দামও তত বেশী।

একটা উদাহরণ দেয়া যাক, সদ্য সমাপ্ত বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড সিরিজের সম্প্রচার-স্বত্ব বিক্রি হয়েছিলো ৮৭ লক্ষ টাকায়। আজ থেকে শুরু হতে যাওয়া বাংলাদেশ-শ্রীলংকা সিরিজের সম্প্রচার-স্বত্ব বিক্রি হয়েছে ১ কোটি ১ লক্ষ টাকায়। এখন বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে সিরিজ হলে তার সম্প্রচার-স্বত্ব থেকে আয়ও অনেক কমে যাবে। সম্প্রচার-স্বত্বের মতো একই ভাবে  খেলার অন্যান্য স্পন্সরশীপ বিক্রি থেকে আয় খেলার প্রতিদ্বন্দ্বিতা-কারী দলের ভিত্তিতে উঠানামা করে। মনে পড়ে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের এক সিরিজের স্পন্সরশীপ জোগাড় করতে খেলা শুরুর আগের দিন পর্যন্ত বিসিবিকে অপেক্ষা করতে হয়েছিলো। এখন বাংলাদেশ যদি ইন্ডিয়ার সাথে খেলে, শোনা যায়, সেই খেলার সম্প্রচার-স্বত্ব বিক্রি করে এতো আয় হয় যে বিসিবিকে কয়েক বছর আর টাকা নিয়ে ভাবতে হয় না!! ক্রিক-ইনফোতে প্রকাশিত এক  রিপোর্টে বলা হয় ইন্ডিয়া খেললে খেলার ফরম্যাট-ভেদে (টেস্ট, ওয়ানডে বা টি-২০) ম্যাচ প্রতি স্বাগতিক দেশের আয় হয় প্রায় ৫ থেকে ১০ মিলিয়ন ডলার।

প্রশ্ন আসবে ইন্ডিয়ার খেললে আয় বেশী হয় কেন। ইন্ডিয়ার এক বিশাল দর্শক ভিত্তি আছে। মাঠের দর্শক তো আছেই, সেই সাথে আছে বিশাল টিভি দর্শক। ইন্ডিয়ার এই বিরাট দর্শক সংখ্যার মধ্যে রয়েছে বিশাল মধ্যবিত্ত শ্রেণী। এই খেলা সম্প্রচারের সময় এতো বিশাল মার্কেটে বিজ্ঞাপন দেয়ার মতো আছে অনেক ইন্ডিয়ান কোম্পানি। এই দর্শকদের ক্রয় ক্ষমতা এবং সেই দর্শকদের কাছে পণ্য বা সেবা বিক্রিতে আগ্রহী কোম্পানীর সংখ্যা এসব মিলিয়ে ইন্ডিয়ার খেলা মানেই এক এলাহি কারবার।

বাংলাদেশেরও তো দর্শক আছে। তাহলে বেশী আয়ের আশায় আমাদের সাথে খেলার জন্য সবার আগ্রহী হবার কথা। কিন্তু তার বদলে আমাদের টেস্ট ক্রিকেট থেকে বিদায় করে দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে কেন?  আমাদের দেশে ক্রিকেট অনুরাগী অনেক। কিন্তু খেলার মাঠে ও টিভির সামনে বসতে পারা দর্শকের সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে কম। এছাড়া এই দর্শকদের ক্রয়-ক্ষমতার প্রশ্ন আছে। এই দর্শক মার্কেটে পণ্য বা সেবা বিক্রি করতে আগ্রহী প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানির সংখ্যাও তুলনামূলক ভাবে ছোট।  এছাড়া আমাদের ক্রিকেটের মান নিয়েও প্রশ্ন আছে। ধরা যাক, বাংলাদেশে যদি এখন স্কটল্যান্ড খেলতে আসে, বাংলাদেশের কতজন দর্শকের তাতে আগ্রহ থাকবে? তেমনি বাংলাদেশের সাথে অন্য শক্তিশালী দেশের খেলা নিয়ে সেই দেশের দর্শকদের আগ্রহ কম বেশী হতে পারে। এর ফলে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে খেললে সেই খেলার  সম্প্রচার-স্বত্বের মূল্য তেমন বেশী হয় না।

তার মানে দাঁড়াচ্ছে এই, ক্রিকেটের বাণিজ্যে ইন্ডিয়ার ক্রিকেট বোর্ডের রয়েছে বিশাল প্রভাব। ইন্ডিয়ার সাথে খেললে সেই খেলা সম্প্রচারের স্বত্ব অনেক বেশী দামে বিক্রি হয়। কারণ ইন্ডিয়াতে সেই খেলা সম্প্রচার করে ইন্ডিয়ান কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে বিজ্ঞাপন বাবদ বিশাল আয়-উপার্জন করা যায়।

আইসিসি’র টাকা আসে আইসিসি ইভেন্ট থেকে। সব ক্রিকেট আইসিসি ইভেন্ট নয়। ক্রিকেট বিশ্বকাপ, টি-২০ ওয়ার্ল্ড কাপ, অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ, প্রমীলা বিশ্বকাপ, এসোসিয়েট দেশগুলো নিয়ে  সাবেক আইসিসি ট্রফির ধরণের নানা টুর্নামেন্ট প্রভৃতি হল আইসিসি ইভেন্ট।  কিন্তু বাংলাদেশে এখন যে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা সিরিজ হচ্ছে সেটা আইসিসি ইভেন্ট নয়। এই খেলা থেকে আয়ের ভাগ পাবে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। তবে আয়োজক দেশ হিসাবে সিংহভাগ পাবে স্বাগতিক বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। আইসিসি ইভেন্ট হলে সেই খেলার সিংহভাগ জমা হয় আইসিসির তহবিলে।  

আইসিসি ইভেন্টে সব দেশের অংশগ্রহণ থাকে বলে তা থেকে আয়ও অনেক বেশী। যেমন ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের সম্প্রচার স্বত্ব বিক্রি হয়েছে ২ বিলিয়ন ডলারে (প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা)। এর পুরোটাই মুনাফা নয়। অনুষ্ঠান আয়োজনের খরচ, আয়োজক দেশের জন্য বরাদ্দ, প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর জন্য বরাদ্দ এবং আইসিসির নিজস্ব প্রশাসনিক খরচ বাদ দেয়ার পর যা মুনাফা হয় সেটাই আইসিসির তহবিলে জমা হয়। এভাবে ২০১১ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ থেকে আইসিসির নীট মুনাফা হয়েছিলো প্রায় ৩২২ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ২৫০০ কোটি টাকা)। এভাবে বর্তমান বাণিজ্যিক সাইকেলে আইসিসি’র আয় প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলার।

এখন প্রশ্ন হল, আইসিসি এই টাকা দিয়ে কি করে? আইসিসি মুনাফার অংশের ৭৫ ভাগ দশটি টেস্ট খেলুড়ে দেশ তথা পূর্ণ সদস্য দেশের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ করে দেয়। অর্থাৎ আইসিসি মুনাফার সাড়ে সাত শতাংশ পায় বাংলাদেশ। বাকি সব দেশও এভাবে সমান ভাবে সাড়ে সাত শতাংশ করে পায়। টেস্ট খেলুড়ে দেশ গুলোকে এভাবে বরাদ্দ দেয়ার পর বাকি ২৫% আইসিসি ব্যয় করে সহযোগী সদস্য দেশের ক্রিকেট উন্নয়ন খাতে। যেমন চীন, মালয়েশিয়া, আয়ারল্যান্ড প্রভৃতি দেশের ক্রিকেটে আই আইসিসি বরাদ্দ দেয়।

ইন্ডিয়া-ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বোর্ড তাদের প্রস্তাবে বলেছে সবার মধ্যে এভাবে সমানভাবে টাকা ভাগ করে দেয়া চলবে না। কারণ আইসিসি যে আয় করে, তার পিছনে সবার ভূমিকা সমান নয়। তারা বলেছে, ইন্ডিয়া যদি আইসিসি ইভেন্টে না খেলা তাহলে আইসিসির আয় প্রায় ৮০ ভাগ কমে যাবে। (বি: দ্রঃ ইন্ডিয়া ছাড়া আইসিসি ইভেন্ট হলে আইসিসির আয় ৮০ ভাগ কমে যাবে এই দাবীর পিছনে কোন সাপোর্টিং ডকুমেন্ট অবশ্য দেয়া হয়নি। প্রায় ছয় বছর আইসিসির অর্থ বিভাগের নেতৃত্ব দেয়া ও আইসিসির সাবেক প্রেসিডেন্ট এহসান মানির মতে ইন্ডিয়া না খেললে আইসিসি ইভেন্ট থেকে আয় অনেক কমে যাবে, তবে তা কিছুতেই ৮০ ভাগ হ্রাস পাবে না।)। যাই হোক, তাদের মতে আইসিসি’র আয়ের পিছনে ইন্ডিয়া-ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া এই তিন দেশের অবদান সবচেয়ে বেশী। তাই ভবিষ্যৎ আইসিসির আয় যা বাড়বে, সেই বাড়তি অংশে তিন দেশকে সবচেয়ে বেশী অংশ দিতে হবে। যেমন, আইসিসির বর্তমান আয় দেড় বিলিয়ন ডলার। এটা যদি বেড়ে সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার হয়, তাহলে এই বাড়তি ২ বিলিয়ন ডলারের ৫৪ শতাংশ দিতে হবে ইন্ডিয়া-ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়াকে।

এখানে উল্লেখ্য যে, সব দেশ সমান ভাবে আইসিসি’র বরাদ্দের উপর নির্ভরশীল নয়। বিশেষ করে ইন্ডিয়া-ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া মোটেই আইসিসির আয়ের উপর নির্ভরশীল নয়। ঘরোয়া ক্রিকেটের স্বত্ব বিক্রি ও অন্যান্য বাণিজ্যিক পার্টনারদের সাথে চুক্তির ভিত্তিতে ইংল্যান্ড ২০১২ সালে আয় করেছে ২৮০ মিলিয়ন পাউন্ড। এই সময় কালে একই খাত থেকে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট বোর্ডের আয় ছিল ৫০০ মিলিয়ন ইউএস ডলার। ইন্ডিয়ার আর এর চেয়েও অনেক বেশী। কারণ তার রয়েছে আইপিএল। মোটামুটি ভাবে দেখা যায়, এই তিন দেশের ক্রিকেট বোর্ডের আয়ের ২০% বা তার কম আসে আইসিসি থেকে। কিন্তু বাকি দেশগুলোর ক্ষেত্রে আইসিসির বরাদ্দ তাদের আয়ের অন্যতম প্রধান অংশ। 

এভাবে ইন্ডিয়া-ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বোর্ড  আইসিসি’র মুনাফা থেকে বেশী টাকা নিয়ে নিলে অন্যদের ভাগে কম পড়বে। তাদের এই আয় কমে যাওয়ার ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার জন্য প্রস্তাবে বলা হয়েছে, আইসিসির সহযোগী দেশগুলোর ২৫% বরাদ্দ অর্ধেক কমিয়ে দিতে হবে। সেই “গরীবের টাকা” নিয়ে এসে একটি “টেস্ট ম্যাচ ফান্ড” তৈরি করার হবে। এই টেস্ট ম্যাচ ফান্ডের টাকা পাবে দক্ষিণ আফ্রিকা বাদে বাকি পূর্ণ সদস্য সব দেশ। তার মানে ভবিষ্যতে টেস্ট খেলার অধিকার না থাকলেও বাংলাদেশ এই টেস্ট ম্যাচ ফান্ডের ভাগ পাবে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা পাবে না।  

দক্ষিণ আফ্রিকার কে তারা টাকা দিতে চায় না কারণ ইন্ডিয়ার ক্রিকেট বোর্ড দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট বোর্ডকে একটা শিক্ষা দিতে চায়। দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের বোর্ডের সিইও বানিয়েছে সাবেক আইসিসি সিইও হারুন লোরগাটকে। ইন্ডিয়ার এটি পছন্দ হয়নি। ইন্ডিয়া চেয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের দেশের ক্রিকেট বোর্ডের সিইও কাকে করবে সে ব্যাপারে ইন্ডিয়ার পরামর্শ শুনুক। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা সেই কথা না শুনে নাই। এতে ইন্ডিয়া ভীষণ নাখোশ।  এজন্য দক্ষিণ আফ্রিকায় ইন্ডিয়া তাদের সফর বাতিল করে দিতে চেয়েছিল। শেষে ইন্ডিয়া বিষয়ক কোন কাজে দক্ষিণ আফ্রিকা হারুন লোরগাটকে আনবে না এই প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে ইন্ডিয়া দুটি টেস্ট ও তিনটি ওয়ানডে খেলতে যেতে রাজি হয়। মূল প্ল্যানে ছিল ইন্ডিয়া সেখানে তিনটি টেস্ট, সাতটি ওয়ান ডে ও দুটি টি-টুয়েন্টি খেলবে। হারুন লোরগাটকে সিইও বানানোর জরিমানা হিসাবে ইন্ডিয়া  সফর থেকে একটি টেস্ট, চারটি ওয়ান ডে ও  দুটি টি টুয়েন্টি কেটে দেয়। আগেই বলা  হয়েছে, ইন্ডিয়ার সাথে খেলা মানেই বিশাল আয়। সেই হিসাবে, সফরে ম্যাচ কমিয়ে দেয়া মানেই হল স্বাগতিক দেশের জন্য বিশাল আর্থিক ক্ষতি।

হারুন লোরগাট এর পিছনে ইন্ডিয়া ক্রিকেট বোর্ডের এভাবে লাগার কারণ তাদের দৃষ্টিতে হারুন লোরগাট নানা “অপরাধে অভিযুক্ত”

(১) হারুন লোরগাট আইসিসি সিইও থাকার সময় খেলায় ক্যামেরার মাধ্যমে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত রিভিউ করার  ডিআরএস পদ্ধতি সব খেলায় চাপিয়ে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। বাকি সব দেশ খেলায় এই প্রযুক্তি ব্যবহারে রাজি থাকলেও ইন্ডিয়া মোটেই রাজি নয়। হারুন লোরগাটের চাপে ক্রিকেট বিশ্বকাপে ডিআরএস পদ্ধতি সীমিত পরিসরে ব্যবহৃত হয়েছিলো।

(২) হারুন লোরগাট আইসিসি’র প্রশাসন ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা সংস্কারের জন্য উলফ কমিশন গঠন করেছিলেন। এই উলফ কমিশনের অন্যতম একটা সুপারিশ ছিল, আইসিসিকে শক্তিশালী দেশগুলোর প্রভাবমুক্ত করার জন্য স্বাধীন আইসিসিতে ডিরেক্টর ও নিরপেক্ষ ডিরেক্টর নিয়োগ এবং আইসিসির টাকা সমান ভাগে ভাগ না করে যে দেশের যেমন দরকার সেই দেশকে তার প্রয়োজনের ভিত্তিতে টাকা দেয়া। লক্ষণীয় যে, এই দুটি পরামর্শই ইন্ডিয়া-ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া প্রস্তাবে ১০০% উলটে দেয়া হয়েছে। বড় দেশের প্রভাবমুক্ত করার পরিবর্তে আইসিসিকে এই তিন দেশের নিয়ন্ত্রণে আনার এবং প্রয়োজনের ভিত্তিতে  টাকা দেয়ার বদলে এই তিন দেশকে বেশী টাকা দেয়ার প্রস্তাব আনা হয়েছে।

(৩) কোন দেশ কার সাথে কখন কোথায় কতবার খেলবে তার একটা সূচী আই আইসিসি তাদের ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রামে (এফ টিপি) ঠিক করে দেয়। ইন্ডিয়া বরাবরই এই এফটিপির লঙ্ঘন করে এসেছে। যেমন গত ১৩ বছরে বাংলাদেশকে একবারের জন্যও তারা ইন্ডিয়া সফরে ডাকে নাই। অথচ এফটিপি অনুযায়ী এই সময়ে অন্তত দুইবার বাংলাদেশের ইন্ডিয়া সফর করার কথা ছিল। এভাবে এফটিপি লঙ্ঘনের দায়ে হারুন লোরগাট ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তাব তুলেছিলেন। ইন্ডিয়া এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হারুন লোরগাটের বিরুদ্ধে নৈতিক অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে আইসিসির মাধ্যমে তদন্তের দাবী তুলেছে।

সব মিলিয়ে হারুন লোরগাট আইসিসি সিইও থাকা কালে ইন্ডিয়ার সাথে বেশ কিছু বিষয়ে ক্যাচাল বাধিয়েছিলেন। তাই এমন কোন লোককে দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের বোর্ডের সিইও করুক সেটা ইন্ডিয়া চায় নাই। এই গেলো দক্ষিণ আফ্রিকার উপর ইন্ডিয়ার নাখোশ হবার কারণ। তার পরিণতিতেই আইসিসির ফান্ড থেকে দক্ষিণ আফ্রিকাকে একতরফা-ভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে।

এটা ঠিক যে এই তিন দেশের ক্রিকেটের অর্থনৈতিক ভিত্তি অন্যদের তুলনায় শক্তিশালী এবং তাদের অংশগ্রহণের কারণে আইসিসি ইভেন্টের আয়-রোজগার ভালো হয়। তাই সেই আয়-রোজগারের বেশী অংশ তারা দাবী করতেই পারে। আবার বিপক্ষে বলা যায়, ইন্ডিয়ার সকল দর্শক যে শুধু ইন্ডিয়ার জন্য ক্রিকেট দেখে তা নয়। ইন্ডিয়া ছাড়া বিশ্বকাপ হলেও ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা থেকে ইন্ডিয়াতে বিশ্বকাপের দর্শক থাকত। তাই আইসিসি ইভেন্টের জন্য নিজ নিজ দেশের দর্শকদের আগ্রহের একমাত্র দাবীদার কেবল এই তিন দেশ নয়। ফুলের প্রতি মানুষের যেমন ভালোবাসা থাকে, অনেক ফুলের সমন্বয়ে মালা গাথা হলে সেই মালারও আলাদা একটা মূল্য থাকে। বিশ্বকাপে ইন্ডিয়া আছে বলে বিশ্বকাপের দর্শক যেমন বাড়ে, তেমনি খেলাটা সকল দলের অংশগ্রহণে বিশ্বকাপ বলে সেই খেলায় ইন্ডিয়ার অংশগ্রহণের মূল্য আলাদাভাবে বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এই সবই একাডেমিক আলোচনা। বাস্তবতা হল, ইন্ডিয়ার সাথে খেলে আর্থিক-লাভ অনেক বেশী। সেটাকে পুঁজি করে ইন্ডিয়া ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াকে সাথে নিয়ে বিসিসিআই আইসিসির মুনাফার বাড়তি অংশ দাবী করছে।

ক্রিকেট ট্যুর প্রোগ্রাম নির্ধারণ:

বর্তমানে টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলো একে অন্যের দেশে কখন কিংবা কতবার সফর করবে তা আইসিসি ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রাম (এফটিপি) এর মাধ্যমে ঠিক করে দেয়। আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশগুলো একে অন্যের সাথে যাতে নিয়মিত খেলতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য টেস্ট দলগুলো প্রতি ১০ বছর মেয়াদে কখন কোথায় সফরে যাবে তা এই এফটিপিতে বলে দেয়া থাকে।  এই এফটিপি মেনে চলা সদস্য-দেশ গুলোর দায়িত্ব।

আইসিসির ১০-বছর মেয়াদী ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রাম (এফটিপি)  এর আওতায় প্রতি ১০-বছর মেয়াদী এফটিপি সাইকেলে  টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোকে অন্তত: একবার করে একে অন্যের দেশে খেলতে যাবার কথা। ২০০১ সাল থেকে ২০১০ সালের প্রথম ১০-বছর মেয়াদী এফটিপি শেষ। এখন চলছে ২০১১ সাল থেকে ২০২০ সালের দ্বিতীয় ১০-বছর মেয়াদী এফটিপি, যার ৩ বছর ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গিয়েছে।

ইন্ডিয়া-ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া বিরুদ্ধে এফটিপি লঙ্ঘনের অভিযোগ আছে। যেমন, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া জিম্বাবুয়ের সাথে খেলেনি। এছাড়া আইসিসির এই এফটিপি বা ট্যুর প্রোগ্রামকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ইন্ডিয়া বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসের ১৩ বছরে একবারও বাংলাদেশকে ভারতে খেলতে ডাকেনি। ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া প্রথম এফটিপি মেনে বাংলাদেশকে তাদের দেশে আমন্ত্রণ জানিয়েছে এবং বাংলাদেশে সফরে এসেছে। কিন্তু দ্বিতীয় এফটিপিতে ভারতের অনুসরণে তারা বাংলাদেশের সাথে খেলা বন্ধ করে দিয়েছে।

এফটিপি মেনে চলতে সমস্যা কোথায়? এফটিপিতে সবার সাথে সবার সিরিজ খেলার নিয়ম। কিন্তু সব সিরিজে সমান লাভ হয় না। কোন কোন সিরিজ থেকে স্বাগতিক দেশের আর্থিক ক্ষতি হবার কথাও শোনা যায়। যেমন এই বছরে ওয়েস্ট ইন্ডিজে শ্রীলঙ্কার সফর থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোর্ডের আর্থিক ক্ষতি হবার প্রজেকশন ছিল। তারা তাই শ্রীলঙ্কার টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজের বদলে শ্রীলঙ্কা ও ইন্ডিয়াকে নিয়ে ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজ আয়োজন করে বিশাল আর্থিক লাভ করেছে। এছাড়া ইন্ডিয়ার মতে বাংলাদেশকে খেলতে ডাকলে তাদের বেশী লাভ হয় না। এর বদলে ইন্ডিয়া বরাবরই বাংলাদেশ সফরের প্রস্তাব করে। এযাবৎ ইন্ডিয়া পাঁচবার বাংলাদেশ সফর করেছে। বাংলাদেশও এর আপত্তি করে না। কারণ ইন্ডিয়াকে দেশে হোস্ট করতে পারলে লাভের শেষ নাই!  কোন সিরিজে লাভ হবে, কোন সিরিজে ক্ষতি হবে। মোটের উপর পুষিয়ে যাবার কথা। কিন্তু যদি এফটিপির অলাভজনক খেলাগুলো না যদি খেলি, তাহলেই তো ক্ষতি পুরোপুরি এড়ানো সম্ভব...এরকম চিন্তা থেকে এফটিপি লঙ্ঘনের সূত্রপাত ঘটে।     

এফটিপি নিয়ে সবচেয়ে গুরুতর সমস্যার সূত্রপাত ইন্ডিয়ার ঘরোয়া টি-২০ টুর্নামেন্ট আইপিএল শুরুর পর থেকে। যেহেতু এটা ইন্ডিয়ার ঘরোয়া টুর্নামেন্ট, তাই এই টুর্নামেন্টের জন্য এফটিপিতে কোন জায়গা বরাদ্দ করতে আইসিসি রাজি নয়। কিন্তু সেই সময় যদি অন্য দেশের খেলা চলতে থাকে তাহলে সেইসব দেশের অনেক নামী খেলোয়াড়েরা আইপিএল-এ আসতে পারে না। এতে আইপিএল এর দলগুলোর যেমন সমস্যা হয়, তেমনি টুর্নামেন্টের আকর্ষণের কমতি পড়ে। ইন্ডিয়া বারবার আইসিসির উপর চাপ দিয়েছে আইপিএল এর জন্য এফটিপিতে সময় রাখা হোক। তা যেহেতু আইসিসি দেয়নি, তাই এই এফটিপি প্রোগ্রাম বাতিল করে দেয়া ইন্ডিয়ার জন্য কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ইন্ডিয়া-ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার প্রস্তাবে বলে হয়েছে এফটিপি বাতিল হয়ে যাবে এবং তার পরিবর্তে টেস্ট দলগুলো নিজেদের মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি করবে। এর ফলে তাদের কোন অলাভজনক খেলা খেলতে হবে না এবং আইপিএল এর মতো টুর্নামেন্ট এর জন্য সময় বের করা যাবে।

এফটিপির বদলে দ্বি-পাক্ষিক চুক্তিভিত্তিক সফরে সমস্যা কোথায়? সবাই এফটিপি মেনে না চললেও এফটিপির কারণে বাংলাদেশে অনেক দলকে খেলতে আসতে হয়। এফটিপি বাতিল হলে তখন বাংলাদেশেকে খেলা পাবার জন্য অন্যদলের সাথে দেন-দরবার করতে হবে। বাংলাদেশে সফরে আসলে গত কয়েক বছরে নিউজিল্যান্ডের নাকুনি চুবানি অবস্থা হচ্ছে। এফটিপি না থাকলে চিন্তা করে দেখুন তাদের বাংলাদেশে আবার তাদের আনতে আমাদের মত কাঠখড় পোড়াতে হবে।

আগেই বলা হয়েছে, সাধারণভাবে আমাদের খেলার মান অন্যদের মতো ধারাবাহিক ভাবে ভালো নয় বলে একটা রেপুটেশনের সমস্যা রয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশকে সফরে ডাকা অনেকের জন্যই লাভজনক হয়না।  এফটিপি সকলে মানে না। তবে এফটিপি না থাকলে এখন যেসব ম্যাচ পাওয়া যায় সেটিও আর পাওয়া অনেক কষ্টকর হয়ে দাড়াতে পারে।

প্রস্তাব অনুসারে ২০১৫ সাল থেকে আগামী ৫ বছর বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের আর টেস্ট খেলার সম্ভাবনা নেই। এখন বাংলাদেশ যদি আদৌ আর টেস্ট না খেলে সেক্ষেত্রে এফটিপি থাকা বা না থাকার এই ব্যাপার  অনেকটাই অবান্তর হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে হয়তো দ্বি-পাক্ষিক চুক্তির আওতায় বাংলাদেশকে ওয়ানডে সিরিজ আয়োজনেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে।

তবে এটি শুধু বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের সমস্যা না। এফটিপি না থাকলে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও নিউজিল্যান্ডকেও বিগ থ্রি ইন্ডিয়া-ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার সাথে ম্যাচ পেতে কষ্ট করতে হতে পারে। ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া অবশ্য নিশ্চয়তা দিয়েছে বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ে বাদে (বিঃদ্রঃ এই দুটো দলকে প্রস্তাব অনুসারে আপাতত আর টেস্ট খেলতে দেয়া হবে না) বাকি দলগুলোর সাথে প্রথম মেয়াদে তারা দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি করবে। ইন্ডিয়া অবশ্য এই রকমের কোন নিশ্চয়তা দেয় নি।  খেলা বা খেলার মান মুখ্য বিষয় নয়, খেলার আর্থিক বিবেচনাই তখন ম্যাচ শিডিউল নির্ধারণের ক্ষেত্রে বড় প্রভাব রাখতে পারে।

আইসিসি নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা ইন্ডিয়া, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার হাতে তুলে দেয়া:

একটা সময় ছিল ক্রিকেট বিশ্ব নিয়ন্ত্রিত হতো ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার অঙ্গুলি হেলনে। ১৯৯৬ এর বিশ্বকাপের পর থেকেই বিশ্ব ক্রিকেটে ইন্ডিয়ার অর্থনৈতিক দাপট পরিস্ফুট হতে থাকে। ফলে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার একচেটিয়া আধিপত্যের দিন অবসান হয়ে তা ধীরে ধীরে ইন্ডিয়ার হস্তগত হয়। ইন্ডিয়ার এই একচেটিয়া প্রাধান্য বিস্তারের প্রচেষ্টায় যা কিছু বাদ প্রতিবাদ হয়েছে, তা এসেছে   ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকে। ফলে আমেরিকান ব্লক ও রাশিয়ান ব্লকের ভেতরে যেমন প্রায় অর্ধ শতাব্দী জুড়ে বিশ্বে কোল্ড-ওয়ার চলেছে, ক্রিকেট দুনিয়াতেও তেমনি চলে এসেছে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া বনাম ইন্ডিয়া-এশিয়ান ব্লকের ক্রিকেটীয় কোল্ড-ওয়ার। পূর্ণ-প্রস্তুতি না থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশকে ২০০০ সালে যে টেস্ট স্ট্যাটাস তথা আইসিসি’র পূর্ণ সদস্যপদ দেয়া হয়েছিলো তার পেছনেও অন্যতম কারণ ছিল এই কোল্ড-ওয়ার। পূর্ণ সদস্য হিসাবে বাংলাদেশের ভোটাধিকার আইসিসিতে ইন্ডিয়ার নেতৃত্বাধীন এশিয়ান ব্লকের ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছিলো।

এখন ইন্ডিয়া, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বোর্ডের যৌথ প্রস্তাবনা এক অর্থে ক্রিকেটীয় সেই কোল্ড ওয়ারের অবসানের ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশেষ করে ইংলিশ ক্রিকেট বোর্ড গত এক দশক ধরে ইন্ডিয়ার ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই এর সাথে নানা বৈরিতায় জড়িয়ে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে। এখন তারা সেই বৈরিতার অবসান ঘটিয়ে বিসিসিআই এর সাথে জোট বেধেছে। ফলে বিশ্ব-ক্রিকেটের সাবেক প্রভু আর বর্তমান প্রভুদের সম্মিলিত রূপই হল ইন্ডিয়া, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বোর্ডের জোট।

ক্রিকেটের অন্যদেশগুলোর ভোটাধিকার এক অর্থে মূল্যহীন। কারণ ইন্ডিয়ার ক্রিকেট বোর্ড তাদের অর্থনৈতিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এই ভোটাধিকারের শক্তিকে অর্থহীন করে ফেলেছে। যেমন, ক্রিকেটে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত মূল্যায়নে প্রযুক্তির ব্যবহারের ডিআরএস পদ্ধতি সার্বজনীন প্রয়োগের ক্ষেত্রে ইন্ডিয়ার ক্রিকেট বোর্ড ছাড়া আইসিসি’র সকল দেশ একমত। শুধুমাত্র বিসিসিআই এর আপত্তির কারণে এই ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া যাচ্ছে না। ব্যাপারটা দাঁড়াচ্ছে  এই, ইন্ডিয়ার ক্রিকেট বোর্ড এর অমতে আইসিসিতে কোন সিদ্ধান্তই নেয়া যায় না।         

নতুন প্রস্তাবে বলা হয়েছে, মূলত: এই তিন দেশের সমন্বয়ে একটা “নিরাপত্তা পরিষদ” গঠিত হবে। চার সদস্যে এই নিরাপত্তা পরিষদে এই তিন দেশের স্থায়ী সদস্য পদ থাকবে এবং চতুর্থ স্থানটি বাকি সাত টেস্ট খেলুড়ে দেশের পক্ষ থেকে একজন এসে পূরণ করবে। আইসিসির সিদ্ধান্ত পাশ করতে হলে এই নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন লাগবে। অর্থাৎ, ক্রিকেট বিশ্বের শাসনভার এই তিন দেশের সিন্ডিকেটের হাতে তুলে দিতে হবে।

সুতরাং, ব্যাপারটি নতুন কিছু নয়। এতদিন যা চলে এসেছে সেই অর্থনৈতিক স্বৈরাচারকেই এবার প্রাতিষ্ঠানিক-রূপ দেয়া হচ্ছে।

প্রমোশন-রেলিগেশনের ব্যবস্থাসহ দুই-স্তর বিশিষ্ট টেস্ট ক্রিকেট

ইন্ডিয়া, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বোর্ডের প্রস্তাবিত নিয়মে টেস্ট ক্রিকেট খেলবে আটটি দেশ। বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়েকে টেস্ট ক্রিকেট  থেকে বিদায় জানিয়ে দেয়া হবে। বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ে খেলবে সহযোগী দেশগুলোর সাথে।  তাদের মধ্যে সেরা দলটি প্রতি পাঁচ বছর অন্তর টেস্ট ক্রিকেটের অষ্টম দেশের সাথে প্লে-অফ খেলার সুযোগ পাবে এবং সেই অষ্টম স্থানের দলকে হারাতে পারলে নতুন একটি দল টেস্ট খেলার সুযোগ পাবে। তার মানে এই, বাংলাদেশের টেস্ট ভবিষ্যৎ এখানেই শেষ। এখন থেকে বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ে, আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড বা আফগানিস্তানের মতো দলের সাথে চার বা পাঁচ দিনের ম্যাচ খেলবে। এভাবে পাঁচ বছর খেলার পর তাদের মধ্যে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে পারলে বাংলাদেশ সুযোগ পাবে টেস্ট ক্রিকেট খেলার ভর্তি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হবার। পাঁচ বছর শক্তিশালী দলের সাথে খেলার সুযোগ না পেয়ে পাঁচ বছর পর যখন বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ড কিংবা ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দলের মুখোমুখি হবে, সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হবার সম্ভাবনা প্রায় শূন্যের কোঠায়। তার মানে দাঁড়ায়, আমাদের টেস্ট ক্রিকেট জীবনের এখানেই ইতি।

বাংলাদেশের এতো বড় সর্বনাশ করে ইন্ডিয়ার ক্রিকেট বোর্ডের লাভ কি?  বাংলাদেশ টেস্ট খেলুক কি না খেলুক তাতে ইন্ডিয়ার কিছু আসে যায় না। বাংলাদেশকে টেস্ট খেলতে দিলে বাংলাদেশের সাথে খেলার প্রশ্ন আসে। বাংলাদেশের সাথে খেলার বাধ্যবাধকতার একটা বিধান হল আইসিসির ১০-বছর মেয়াদী ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রাম (এফটিপি)। এখন তো নতুন প্রস্তাবনায় এফটিপি উঠিয়ে দেয়ার কথা হয়েছে। তাহলে  অন্যদের মতো বাংলাদেশকেও দ্বি-পাক্ষিক সমঝোতার ভিত্তিতে টেস্ট খেলার সুযোগ করে দিতে ইন্ডিয়ার সমস্যা কোথায়?

ইন্ডিয়ার কোন সমস্যা নেই। সমস্যা ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ায়। আইসিসির রাজনীতিতে বাংলাদেশ তাই ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার কাছে এক অনাকাঙ্ক্ষিত শিশু। বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস পাক ক্রিকেট-রাজনীতির সমীকরণের কারণেই তারা শুরুতেই সেটা চায় নি। এরপর যতবারই বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস কেড়ে নেয়ার প্রসঙ্গ উঠেছে সেটা এসেছে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া ব্লক থেকেই। এছাড়া রবার্ট মুগাবে সরকারের সাথে রেষারেষির ফল হিসাবে জিম্বাবুয়েকে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া প্রকাশ্য শত্রু হিসাবে ঘোষণা করেছে। জিম্বাবুয়ের সাথে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া অর্থনৈতিক অবরোধ তো আছেই, এই দুই দেশ জিম্বাবুয়ের সাথে ক্রিকেটীয় সংযোগও ছিন্ন করেছে।  ইংল্যান্ড এমনকি জিম্বাবুয়েকে আইসিসি থেকে বহিষ্কারের দাবীও তুলেছে। ফলে বাংলাদেশের সাথে জুড়ে দিয়ে জিম্বাবুয়েকে শায়েস্তা করার এই এক বড় সুযোগ।

ইদানীং আবার আয়ারল্যান্ডের ও স্কটল্যান্ডের টেস্ট ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা উঠছে। সেসব দেশের ক্রিকেটের মান, জনপ্রিয়তা, খেলোয়াড়ের সংখ্যা  ও ক্রিকেটীয় অবকাঠামো অত ভালো পর্যায়ে নেই বলে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের মতো আরো কিছু টেস্ট শিশু তৈরি করা যাচ্ছে না। ফলে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়েকে তাই আয়ারল্যান্ড-স্কটল্যান্ড-হল্যান্ডের সাথে নামিয়ে দিতে পারলে বরং  ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া ব্লকের এসব দেশের জন্য কিছু সম্ভাবনা তৈরি করা যায়।

এই পরিকল্পনায় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারতো ইন্ডিয়া। কিন্তু ইন্ডিয়া, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার এই যৌথ প্রস্তাবনার মধ্য দিয়ে মূলত: এই ক্রিকেটীয় কোল্ড-ওয়ার এর পরিসমাপ্তি ঘটতে চলেছে। ফলে বিশ্ব রাজনীতির কোল্ড-ওয়ার এর পরিসমাপ্তিতে যেমন বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আফ্রিকার রাজনৈতিক গুরুত্ব করে গিয়েছিল, ক্রিকেটীয় কোল্ড-ওয়ারের অবসানের মধ্য দিয়েও ক্রিকেট রাজনীতিতে ইন্ডিয়ার বাংলাদেশের গুরুত্ব কমে যাচ্ছে। ফলে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া ব্লকের সাথে সমঝোতার খাতিরে বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট খেলার ভবিষ্যতকে বলি দিয়ে দিতে ইন্ডিয়ার কোন আপত্তি নেই। এই পরিকল্পনা ইন্ডিয়ার জন্য ফিউচার-প্রুফও বটে। কারণ এই যৌথ প্রস্তাবে বাংলাদেশের পূর্ণ সদস্যপদ কিংবা  টেস্ট স্ট্যাটাস কেড়ে নেয়ার কথা বলা হয়নি, শুধু বলা হয়েছে টেস্ট খেলতে দিতে না দেয়ার কথা। ফলে ভবিষ্যতে কোন ওলট-পালট হলেও এশিয়ান ব্লকের ভোটাধিকারে কোন হেরফের হচ্ছে না।

সার্বিক মূল্যায়নঃ

ইন্ডিয়া, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার এই যৌথ প্রস্তাবনার  আইসিসি আয়-রোজগারের ভাগবন্টন এবং এফটিপি বাতিল করে দ্বি-পাক্ষিক চুক্তির ভিত্তিতে ট্যুর প্রোগ্রাম আয়োজনের বিষয়গুলো অর্থনৈতিক। ইন্ডিয়ার ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই সরাসরি জানিয়ে দিয়েছে প্রস্তাবের অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে কোন আলোচনা চলবে না। এটা মেনে নিতেই হবে। অন্যথায় আইসিসি’র কোন ইভেন্টে ইন্ডিয়া অংশ নেবে না। অর্থনৈতিক বিষয়াদি ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে আলোচনার ব্যাপারে বিসিসিআই  এর আপত্তি নেই। এই থেকে ধারণা করা যায়, টাকা-পয়সার ব্যাপারে বিসিসিআই এর দাবী মেনে নিলে অন্য বিষয়ে তারা ছাড় দিতে রাজী।

এখন এই ছাড় পাওয়ার দেন দরবারে অন্য দেশের ক্রিকেট বোর্ডের সাথে সাথে বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ডের স্বার্থের ফারাক আছে। অন্যদেশের টেস্ট ভবিষ্যৎ নিয়ে কোন দুঃশ্চিন্তা নেই। তাই অন্যান্য দেশের ক্রিকেট বোর্ড দেন দরবার করবে (১) আইসিসি নির্ধারিত ক্রিকেট ট্যুর প্রোগ্রামের অনুপস্থিতিতে ইন্ডিয়া, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার সাথে খেলা পাবার নিশ্চয়তার প্রশ্নে, (২) আইসিসির পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা ইন্ডিয়া, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার হাতে তুলে দেয়ার প্রশ্নে এবং (৩) সবার জন্য সমান রেলিগেশন ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রশ্নে।

ইন্ডিয়া, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াকে আইসিসির আয়ের সিংহভাগ অংশ ছেড়ে দিলে অন্যান্য দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ কিছু ক্ষয়ক্ষতির শিকার হলেও তিন দেশকে আইসিসির আয়  দখল করে দিতে না দিলেই বরং ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশী। উদাহরণ দেয়া যাক, ২০০৮ সালে পাকিস্তান তাদের দেশে আগামী ৪ বছরের জন্য হোম সিরিজের টিভি সম্প্রচার স্বত্ব বিক্রি করেছিলো ১৪০ মিলিয়ন ডলারে। এর মধ্যে ৯০ মিলিয়ন তারা পেয়েছিলো ইন্ডিয়ার সাথে দুটো সিরিজ খেলার পরিকল্পনার ভিত্তিতে। ইন্ডিয়ার ক্রিকেট বোর্ড ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে আইসিসির আয় বণ্টনের প্রস্তাব মেনে নিলে পাকিস্তানের সাথেও ইন্ডিয়া সিরিজ খেলবে। এখন পাকিস্তানের কাছে অপশন আইসিসির আয় নিয়ে কাড়াকাড়ি কড়া কিংবা ইন্ডিয়ার সাথে সিরিজ খেলে সেখান থেকে টাকা আয় করা। স্বাভাবিকভাবেই এই প্রস্তাবের অর্থনৈতিক ধারাগুলো মেনে নেয়ার পক্ষে পাকিস্তানের অবস্থান নেয়ার সম্ভাবনাই বেশী।  শ্রীলঙ্কার অবস্থাও একই রকম। তারাও এই প্রস্তাবের উপর আলোচনা আপাতত স্থগিত রাখা কথা বললেও প্রস্তাবের বিপক্ষে কিছু বলেনি। কারণ সম্প্রতি টেন স্পোর্টস এর সাথে তারা শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠেয় হোম সিরিজগুলোর সম্প্রচার স্বত্ব বিক্রি করে মোটা অঙ্কের চুক্তি করেছে। সেই চুক্তির অন্যতম অংশ হল ২০১৭ সালে ইন্ডিয়ার সাথে হোম সিরিজ। এখন ইন্ডিয়ার সাথে বাক-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়লে যদি সেই সিরিজ বাতিল হয়ে যায়, তবে এই সম্প্রচার চুক্তির টাকার পরিমাণ বহুলাংশেই কমে যাবে। একই অবস্থায় আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড। নিউজিল্যান্ড তো ইতোমধ্যেই সমর্থন জানিয়ে বসে আছে। জিম্বাবুয়ে এই নিয়ে কথা বলবে কি, তারা আছে নিজের দেশের খেলোয়াড়দের ধর্মঘট নিয়ে ঝামেলায়। ধর্মঘটে ঘরোয়া সব খেলাও বন্ধ হবার জোগাড় হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা আছে একাকী। সুতরাং তারাই তীব্র ভাষায় প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে।

আইসিসি’র আয়ের বেশী অংশ ছেড়ে দেয়ার বিনিময়ে যদি বড় দলগুলো থেকে ম্যাচ পাওয়া যায়, সেই আশায় অন্যেরা এই প্রস্তাব মেনে নেবে বলে ধারণা করা হয়। ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া ইতোমধ্যে দ্বি-পাক্ষিক চুক্তির নিশ্চয়তা দিয়ে রেখেছে। ইন্ডিয়া হয়তো দরকষাকষির জন্য এখনো এই নিশ্চয়তা দেয়নি। কিন্তু ইন্ডিয়ার সাথে খেলার নিশ্চয়তা পেলে চরম পাকিস্তানের মতো চরম রাজনৈতিক শত্রুও ইন্ডিয়ার দাবী মেনে নিবে। তাহলে দেখা যাচ্ছে বাকি সব দেশ আইসিসির আয়-রোজগারের উপর  ইন্ডিয়া, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াকে সিংহভাগ দখল ছেড়ে দিয়ে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি পাবার শর্তে এবং নিরাপত্তা পরিষদের মতো এক্সিকিউটিভ কমিটি গঠন না করা ব্যাপারে হয়তো কিছু সমঝোতা করে নিতে পারবে। কারণ এই আগেই বলা হয়েছে, এক্সিকিউটিভ কমিটি গঠন করে আইসিসি নতুন করে দখল নেয়ার কিছু নেই। সেটা ইতোমধ্যেই অর্থনৈতিক দাপটে দখল হয়ে বসে আছে।

বাংলাদেশকেও হয়তো দ্বি-পাক্ষিক চুক্তির ভিত্তিতে ওয়ানডে সিরিজের টোপ দেয়া হবে। এভাবে অন্যান্য দেশের সাথে মিলিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গেলে বাংলাদেশও সবার মতো সমঝোতায় আসতে পারবে। কিন্তু বাংলাদেশকে যে শুরুতেই টেস্ট ক্রিকেট থেকে ঝাঁটিয়ে বিদায় করে দেয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে তার ব্যাপারে দেন দরবারের দায় বাংলাদেশের একার। এই দেন দরবার অন্য দেশের অবস্থান দেখে করবার মতো সময় হাতে নেই। তাই বাংলাদেশের টেস্ট ভবিষ্যৎ রক্ষায় প্রয়োজন ক্রিকেটীয় ও রাজনৈতিক পর্যায়ে ইন্ডিয়ার সাথে দেন দরবার। ইন্ডিয়া,ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বোর্ডের সমঝোতায়  ক্রিকেটীয় কোল্ড ওয়ারের অবসান ঘটায় বাংলাদেশের ভোটাধিকারের মূল্য এমনিতেই কমে গেছে। বাংলাদেশের টেস্ট খেলার অধিকার রক্ষায় অন্যদেশকে পাশে পাবার সম্ভাবনাও নেই। তাই আইসিসির পরিমণ্ডলে দেন-দরবার সীমিত না রেখে ইন্ডিয়ার সাথে বাংলাদেশ সরকারের রাজনৈতিক সমঝোতাকে পুঁজি করেই এগুতে হবে।

সর্বোপরি বিবেচনা করে দেখলে, এই প্রস্তাবনা ক্রিকেটের জন্য শুভ কিছু নয়। বিশ্ব ক্রিকেট পরিচালনায় অগণতান্ত্রিক নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়ার পাশাপাশি সহযোগী দেশগুলোর উন্নয়ন বরাদ্দের অর্থ কেড়ে নেয়ার ব্যবস্থা এই প্রস্তাবে করা হয়েছে। ক্রিকেটের স্পোর্টিং মূল্যের চাইতে বড় করে দেখা হচ্ছে খেলা থেকে আয় রোজগারের বিষয়টিকে।   ক্রিকেট বিশ্ব এতো দিন ইন্ডিয়ার ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই এর দাবীর কাছে নতি স্বীকার করে এসেছে বলে আজ আইসিসির আয় আমার-ক্ষমতা আমার জাতীয় নগ্ন প্রস্তাব প্রকাশ্যে তুলে ধরা যাচ্ছে।  স্বল্পমেয়াদী লাভা-লাভের বিবেচনায় ক্রিকেট বোর্ডগুলো যদি এই ব্যবস্থা মেনে নেয়, তাহলে ভবিষ্যতে  আরো অনেক বড় অধিকার এভাবেই ভুলন্ঠিত হতে দিতে হবে। তাই মন বারবার করে চায়, নেলসন ম্যান্ডেলার দেশ ম্যান্ডলার মতো সংগ্রামী চেতনায় সমস্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াক। 

 

About the author(s): When one looks up the term "Renaissance Man" in a Bangla obhidhan, our own Syed Kamal's face will grace the description. In his productive life - and it isn't over yet - Syed Kamal has managed to serve as a BCB umpire aspiring to attain ICC certification, earn a living as an Intelligence agent for an "unnamed" US agency, write a romantic/erotic dictionary in Bangla (that somehow ended up on the National Museum's official display of "Bangla Obhidhan er Biborton") and, in his golden years, become a resident in Dubya's home country - Texas. Somehow, between all this, he has also managed to pen this piece.

 

This page has been viewed 5931 times.

 
 

About Us | Contact Us | Privacy Policy | Partner Sites | Useful Links | Banners |

© BanglaCricket